ভারতে পেট্রোলের দাম (Petrol Price) বরাবরই রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে থাকে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক তালিকায় দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে পেট্রোলের দাম ভিন্ন হলেও বিজেপি শাসিত বেশ কয়েকটি রাজ্যে জ্বালানির মূল্য চমকে দেওয়ার মতো। বিশেষ করে মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক এবং তেলেঙ্গানার মতো রাজ্যগুলিতে পেট্রোলের দাম ১০০ টাকার গণ্ডি পেরিয়ে গেছে।
বিজেপি শাসিত রাজ্যে পেট্রোলের আকাশছোঁয়া দাম
যেসব রাজ্যে বিজেপি বা তাদের জোট সরকার ক্ষমতায়, সেখানে সাধারণ মানুষের জন্য পেট্রোলের দাম এক বড় চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। আসুন, কিছু রাজ্যের দামের দিকে নজর দেওয়া যাক—
মধ্যপ্রদেশ: ₹107.31
কর্ণাটক: ₹103.33
গুজরাট: ₹94.99
উত্তরপ্রদেশ: ₹95.11
রাজস্থান: ₹105.44
উত্তরাখণ্ড: ₹93.84
হরিয়ানা: ₹95.35
ত্রিপুরা: ₹97.23
মধ্যপ্রদেশ এবং কর্ণাটকের মতো রাজ্যগুলিতে পেট্রোলের দাম ১০০ টাকার ওপরে থাকলেও কিছু বিজেপি শাসিত রাজ্যে তুলনামূলকভাবে দাম কম, যেমন—উত্তরাখণ্ড (₹93.84) এবং হিমাচল প্রদেশ (₹94.35)। তবে গড় হিসেবে বিজেপি শাসিত বেশিরভাগ রাজ্যেই পেট্রোলের দাম ৯৫ টাকার ওপরে রয়েছে।
অন্য রাজ্যের তুলনায় বিজেপি শাসিত রাজ্যে পেট্রোলের দাম কেন বেশি?
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে পেট্রোলের দাম বেশি হওয়ার কিছু প্রধান কারণ রয়েছে—
1. উচ্চ করের হার: বেশ কয়েকটি বিজেপি শাসিত রাজ্যে পেট্রোলের উপর ভ্যাট (VAT) ও অন্যান্য করের হার বেশি, যা জ্বালানির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
2. কেন্দ্রীয় শুল্কের প্রভাব: কেন্দ্রীয় সরকার একাধিকবার শুল্ক কমানোর দাবি উপেক্ষা করেছে, যার ফলে রাজ্যগুলির ওপর কর কমানোর চাপ পড়ে।
3. পরিবহন ব্যয়: মধ্যপ্রদেশ ও কর্ণাটকের মতো বড় রাজ্যগুলিতে পেট্রোল পরিবহনের খরচ তুলনামূলক বেশি, যা দাম বাড়ার একটি কারণ।
4. বৈষম্যমূলক কর নীতি: কিছু রাজ্যে ট্যাক্স ছাড় থাকলেও, বিজেপি শাসিত বেশ কিছু রাজ্যে তা কার্যকর হয়নি।
অন্য দলের শাসিত রাজ্যের তুলনায় অবস্থা কেমন?
যদিও কিছু বিজেপি শাসিত রাজ্যে পেট্রোলের দাম তুলনামূলক কম, কিন্তু বেশিরভাগ রাজ্যে তা ৯৫ টাকার ওপরে। অন্যদিকে, কিছু অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যের চিত্র তুলনামূলকভাবে ভালো। যেমন—
পশ্চিমবঙ্গ (তৃণমূল কংগ্রেস): ₹105.42
কেরালা (সিপিআইএম): ₹106.40
তামিলনাড়ু (ডিএমকে): ₹101.80
অন্ধ্রপ্রদেশ (ওয়াইএসআর কংগ্রেস): ₹109.60 (সর্বোচ্চ)
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হল, অন্ধ্রপ্রদেশে পেট্রোলের দাম সবচেয়ে বেশি হলেও, অন্যান্য অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে তুলনামূলকভাবে কম ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে, যার ফলে দামে সামান্য হলেও স্বস্তি রয়েছে।
জনগণের প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক বিতর্ক
পেট্রোলের দাম বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বাড়ছে। পরিবহন খরচ বৃদ্ধির ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও বাড়ছে, যা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের জন্য এক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিরোধী দলগুলি বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে, অভিযোগ করছে যে কেন্দ্র সরকার কর কমাতে রাজি নয় বলেই দাম এত বেশি। অন্যদিকে, বিজেপি দাবি করছে যে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধি এবং বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সংকটের কারণে এই দাম বৃদ্ধি হয়েছে।
আগামী দিনে কী হতে পারে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি কেন্দ্রীয় সরকার শুল্ক কমায় এবং রাজ্য সরকারগুলি তাদের ভ্যাট কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে পেট্রোলের দাম কিছুটা কমতে পারে। তবে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম যদি না কমে, তাহলে আগামী দিনে আরও মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা থাকছে।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পেট্রোলের দাম নিয়ে চর্চা তুঙ্গে। বিজেপি শাসিত অনেক রাজ্যে পেট্রোলের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি, যা জনসাধারণের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। যদিও রাজ্য সরকারগুলির করনীতির ভূমিকা রয়েছে, তবুও কেন্দ্রীয় সরকারের কর কমানোই দাম কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হতে পারে। এখন দেখার বিষয়, সরকার এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয় এবং জনগণের স্বস্তি কবে আসবে!